Sittong Tinchuley Lepchaghat Tour Plan

#Sittong – দার্জিলিং জেলার কার্শিয়াং মহকুমার একটি বৃহৎ জায়গা জুড়ে থাকা গ্রামগুচ্ছের মধ্যে একটি পাহাড়ি গ্রাম হলো সিত্তং। এই গ্রামগুচ্ছ সিত্তং খাসমহল নামে পরিচিত। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং পাহাড়ের পথে সবচেয়ে কাছের ভ্রমণকেন্দ্র লাটপাঞ্চার, ৪২৭০ ফুট উচ্চতায় এই পাহাড়ি গ্রাম, যা মহানন্দা অভয়ারণ্যের সর্বোচ্চ স্থান। সিঙ্কোনা চাষের জন্য বিখ্যাত এই শান্ত – স্নিগ্ধ গ্রামের ৫ কিমি দূরে মহানন্দা অভয়ারণ্য। যেখানে শাল, পাইন, টিকের জঙ্গলে হরিণ, বন্য শূকর, চিতা, হাতি, ২৪০ প্রজাতির পাখির (যে কারণে একে পক্ষীপ্রেমিদের স্বর্গ বলে ) দেখা মেলে। মাঝে মাঝে গ্রামের মধ্যেও এই পশুরা চলে আসে। লাটপাঞ্চার থেকে মাত্র ৫ কিমি দূরে অহলদারা ভিউ পয়েন্ট। এখান থেকে পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম শৃঙ্গ তুষারাবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা ও পাহাড় থেকে তরাই -এর দিকে বহমান তিস্তা নদী , দুই- ই দেখতে পাওয়া যায়। কাছেই রয়েছে ১৫০ বছরের পুরানো বৌদ্ধ মনাস্ট্রি।
লাটপাঞ্চার থেকে ১৩ কিমি দূরে কমলালেবুর গ্রাম সিটং। রিয়াং নদীর তীরে সবুজ পাহাড়ের মাঝে এই সুন্দর লেপচা গ্রামের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এখানকার প্রতি বাগানেই কমলালেবুর চাষ হয়। শীতের সময় কমলা হলুদ বর্নে রঞ্জিত হয় এই গ্রাম। শুধু যে কমলালেবুর চাষ দেখার জন্য দর্শকরা আসেন তা নয়, এখানকার শান্ত, নির্জন অপরূপ প্রকৃতি – পাহাড় , পাহাড়ি নদীর ইতিউতি কুলুকুলু ধ্বনি সহযোগে বয়ে চলা, নাম না জানা নানা পাখির সুমধুর ডাক, পুরনো বাঁশের তৈরী সেতু, শতবর্ষ প্রাচীন বাঁশের তৈরি চার্চ, এখানকার অধিবাসীদের সহজ সরল জীবনযাত্রা, তাদের বন্ধুসুলভ আতিথ্য ভ্রমণার্থীদের বারবার এখানে আসার জন্য আকর্ষণ করবে। যদিও নব পরিচিত এই টুরিস্ট স্পটটি এখনো সেভাবে ভিড় হয়না, তাই যারা প্রকৃতি ভালোবাসেন তাদের কাছে এই নির্জন শান্ত ছবির মত সুন্দর গ্রামটি সহজেই মন জয় করে নেবে।
Tinchuley- দার্জিলিং থেকে মাত্র ৩২ কিমি দূরে একটি পার্বত্য গ্রাম এই তিন চুলে। তাকদা থেকে 3 কিমি দূরে প্রায় ৫৮০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত দার্জিলিং জেলার এই গ্রামটি। তিনটি ভিন্ন পাহাড় দিয়ে ঘেরা এই গ্রাম। এই তিনটি পাহাড় চূড়া দেখতে লাগে তিনটি উনুনের বা চুলার মত। তাই এই তিন পাহাড় বেষ্টিত গ্রামটির নামকরণ হয়েছে তিন চুলে। ভ্রমণ কেন্দ্র রুপে সেরম পরিচিতি/ উন্নতি না হলেও স্থানীয় মানুষদের উৎসাহে তৈরী এই মডেল জৈব গ্রামে নেই কোনো কীট নাশকের ব্যবহার। ইকো ট্যুরিজম এই গ্রামে হোম স্টে – এর সুবন্দোবস্ত রয়েছে। এই গ্রাম থেকে দেখা যায় কালিম্পং, দার্জিলিং আর গ্যাংটক শহর।
এখানকার তিনচুলে ভিউ পয়েন্ট থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা সহ পূর্ব হিমালয়ের বিভিন্ন শৃঙ্গের অসাধারণ দৃশ্য, সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের মোহময়ী দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়। এছাড়াও রয়েছে একটি বৌদ্ধ মনাস্ট্রি , সুদৃশ্য বেশ কয়েকটি চা বাগান, চা তৈরির কারখানা, যেগুলো দেখে আপনি জানতে পারবেন কিভাবে চা পাতা তোলা থেকে চা তৈরি হয়। একটি tea estate গ্রামের কাছে সেটি হলো Runglee Rungliot . এছাড়া Peshok tea estate ঘুরে আসতে পারেন। সেই পথে আপনি দেখতে পারেন lover’s meet point view. যেখান থেকে আপনি তিস্তা আর রঙিত নদীর সঙ্গমস্থলের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে পাবেন।
সিত্তং থেকে তিন চুলে যাওয়ার পথে পড়বে নতুন আর একটি ভ্রমণ কেন্দ্র লামাহাটা। বৌদ্ধ লামাদের পরিধান থেকেই নামকরণ এই জনপদের। এখানে শেরপা, তামাং, ভুটিয়া, দুকপা সম্প্রদায়ের মানুষদের বসতি। ৫৭০০ ফুট উচ্চতায় কুয়াশাচ্ছন্ন পাইনের অরণ্য ঘেরা এই পাহাড়ি গ্রামের মধ্যে মেঘের আনাগোনা আর আলো আঁধারি প্রকৃতির খেলা, ৫০০ বছরের পুরানো বৌদ্ধ মনাস্ট্রি, চা বাগান, ভাগ্যে থাকলে (আবহাওয়া অনুকূলে হলে ) কাঞ্চনজঙ্ঘার শ্বেতশুভ্র মুকুট রাশি আর দূরে বহমান তিস্তা নদী দর্শনার্থীদের মন মাতোয়ারা করে দেবে। পায়ে হেঁটে এই গ্রাম ও তার আশেপাশের অঞ্চল ভ্রমণ করে এক আলাদা অনন্য অনুভূতি আপনি পাবেন।
লামাহাটার সবুজে মোড়া ইকো পার্কের নানারকম গাছ, অর্কিড, ফুলের সম্ভার আর পার্কের চারদিকে রং বেরং – এর পতাকা , হিমেল বাতাস আপনাকে এনে দেবে প্রশান্তি। এখানকার লোকের বিশ্বাস যে , এই প্রার্থনা পতাকাগুলি দিয়ে যখন বাতাস বয়ে যায় তখন এর চারপাশের প্রকৃতি আর মানুষের মনে পবিত্রতা আর শান্তি নিয়ে আসে এই বাতাস।
এই পাইন জঙ্গল পথে ৮ কিমি ট্রেক করে পৌঁছে যাবেন তাকদা। তাকদা অর্কিড বাগানে নানা রকম অর্কিড ফুলের গাছ আর ফুল দেখে চোখে লাগবে রঙিন পরশ।
Lepchaghat – দার্জিলিং থেকে ১৯ কিমি দূরে ৬৯৫৬ ফুট উচ্চতায় লেপচা সম্প্রদায়ের মানুষদের জগৎ, এই ছোটো পার্বত্য গ্রাম – লেপচাজগৎ।
দার্জিলিং শহর থেকে মাত্র ৪৫ মিনিট গাড়িতে করে গেলে আপনি প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠা এই ছবির মত সুন্দর গ্রামে পৌঁছে যাবেন। এই গ্রামটি পশ্চিম বঙ্গ সরকারের অধীন সংরক্ষিত বনের মধ্যে অবস্থিত। এই অঞ্চলটি দেখাশোনা করে West Bengal Forest Development Corporation ( WBFDC).
গগনচুম্বী পাইন, ওক, রডোডেনড্রন অরণ্যের মধ্যে মেঘের আনাগোনা, পাহাড়ী ফুলের সমাহার, পাহাড়ী ঝর্নার ঝিরিঝিরি ধারা সমারোহে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের আধার এই লেপচাজগতে না এলে দার্জিলিং ঘোরা বৃথা। দূরে কাঞ্চনজঙ্ঘার রোদে লাল হয়ে সোনার মত উজ্জ্বল রুপ ধারণ করার অবিস্মরণীয় দৃশ্য ভোলা যাবেনা। টাইগার হিল থেকে যারা কাঞ্চনজঙ্ঘা ভালো করে দেখেননি তাদের লেপচা জগৎ নিরাশ করবে না। দার্জিলিং এর আসল সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে এই লেপচা অধ্যুষিত সুরম্য পাহাড়ি ছোট্ট গ্রামটিতে। পাহাড়কে উপভোগ করতে চাইলে অবশ্যই এই জায়গায় আসতে হবে। নির্জন , নিস্তব্দ এই গ্রামে হোমস্টে – এর ব্যবস্থা আছে। সেখানে রয়েছে থাকা, খাওয়া আর পানীয় জলের সুবন্দোবস্ত । পশ্চিম বঙ্গ সরকার পরিচালিত ফরেস্ট বাংলোর বুকিং সব সময় পাওয়া যায়না। অনেক আগে থেকে বুকিং করতে হয়, তবেই ভাগ্যে পাওয়া যায়। এই ফরেস্ট বাংলো থেকে 1 কিমি দূরে হাওয়াঘর জায়গাটি থেকে বরফাবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘার 5 টি চূড়াই সুদৃশ্য, যদি আবহাওয়া রৌদ্রজ্জ্বল হয়।
আরো একটি জায়গা থেকে তুষার শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘাকে দেখা যায় , সেটি হলো ঘুম রক। যেটি এই বন বাংলো থেকে ১.৫ কিমি দূরে। এখান থেকে বালসান উপত্যকার দৃশ্য অসাধারণ। ঘুম রক থেকে সূর্য উদয় দেখতেও লোকে ভিড় করেন।
বনের পথে চলতে চলতে অনেক পাখির ডাক শুনতে পাবেন, দেখতেও পাবেন কত সুন্দর সুন্দর পাখি। পাখি প্রেমীদের স্বর্গ রাজ্যও বটে এই লেপচা জগৎ। এখানে এলে দিনের বেলায় প্রকৃতির রূপ উপভোগ করতে হবে, রাতে চারদিক নিস্তব্দ হয়ে যায়, কাছে পিঠে কোনো বাজার নেই, তখন ঘন বনের মাঝে ঝিঁঝি পোকার ডাক শুনতে শুনতে , fire place – এর ধারে বসে, দার্জিলিং চা আর মোমো খেতে খেতে গল্পের বই পড়তে ভালোই লাগবে।
এই লেখা এই ব্লগ এবং লেখিকার স্বত্বাধিকার, এই লেখা কপি করা আইনত দণ্ডনীয়।

মৌমিতা মন্ডল

Add a Comment

Your email address will not be published.